এ বইটির নাম A Briefer History of Time, যার অর্থ আগের বইটির সাথে এর পার্থক্য মাত্র দুটো অক্ষরের। A Brief History of Time বইটি  ২৩৭ সপ্তাহ ধরে সানডে টাইমস বেস্ট-সেলার বইয়ের তালিকায় ছিল। বিশ্বের প্রতি ৭৫০ জন মানুষের বিপরীতে বইটির একটি করে কপি বিক্রি হয়েছিল, যা উল্লেখ করার মতো একটি সাফল্য। বইটিতে আধুনিক পদার্থবিদ্যার অন্যতম জটিল কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। অন্য দিকে এই জটিল বিষয়গুলোই কিন্তু কৌতুহলী মনকে অসম্ভব রকম নাড়া দেয়। কারণ, এর মূলে আছে কিছু বড় এবং মৌলিক প্রশ্ন। আমরা মহাবিশ্ব সম্পর্কে কী জানি? যা জানি তা কীভাবেই বা জানি? মহাবিশ্ব কোথা থেকে আসল এবং ভবিষ্যতে এর কী হতে চলেছে? A Brief History of Time বইটির মূল আলোচ্য বিষয় ছিল এগুলোই। এ বইটিরও আলোচনার মূল অংশে এগুলোই থাকবে।


A Brief History of Time প্রকাশিত হবার পর বহু মতামত আসে। সারা বিশ্ব থেকে, সব বয়স এবং পেশার মানুষ মতামত বিভিন্ন পাঠান। বইটির একটি নতুন সংস্করণ বের করার অনুরোধ আসত খুব নিয়মিত।  পাঠকদের প্রত্যাশা ছিল- এতে আগের বইটির বিষয়গুলোই থাকবে, তবে তা হবে আরো স্পষ্ট ও সহজবোধ্যভাবে। অনেকেই হয়তো ভেবেছেন এই বইতে কালের ইতিহাস আরো সংক্ষেপে তুলে ধরা হবে। কিন্তু অনেকের মতামত ছিল আবার আরেকটু বেশি জানার পক্ষে, যা কলেজ পর্যায়ের, কসমোলজির কোর্সের সমান মানের হবে। এ বইটি লেখার পেছনে এই উদ্দেশ্যগুলোই কাজ করেছে। বইটিতে আমরা আগের বইয়ের বিষয়গুলো অক্ষুণ্ণ রেখে প্রয়োজন অনুসারে কিছু কথা যোগ করেছি। কিন্তু আবার এর পরিসর ও সহজবোধ্যতার দিকেও চোখ রেখেছি। আমরা আগের বইয়ের কিছু বিষয় বাদ দিয়েছি বলে আসলেই একে আগের চেয়ে সংক্ষিপ্ত ইতিহাস বলা চলে । আসলে তা করতে গিয়ে বইটির প্রধান ও মূল বিষয়কেই আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

এই সুযোগে আমরা বইটিকে আপডেটও করেছি এবং এতে নতুন তাত্ত্বিক ও পর্যবেক্ষণমূলক ফলাফল যুক্ত করেছি। যেমন পদার্থবিদ্যার সকল বলের একটি পূর্ণাংগ তত্ত্ব অনুসন্ধানের পথে সাম্প্রতিক অগ্রগতি এতে তুলে ধরা হয়েছে। বিশেষ করে এতে স্ট্রিং থিওরির অগ্রগতি আলোচনা করা হয়েছে।  আলোচনা করা হয়েছে ডুয়ালিটি বা দ্বৈততা তথা আপাত দৃষ্টিতে দেখতে আলাদা মনে হওয়া বিভিন্ন তত্ত্বের সাদৃশ্য নিয়ে। এই সম্পর্ক এই ইঙ্গিত দেয় যে, পদার্থবিদ্যায় একটি একীভূত তত্ত্ব (Unified Theory) আছেই। অন্য দিকে, এতে পর্যবেক্ষণ বিষয়ক কিছু নতুন তথ্যও আছে। এতে কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড এক্সপ্লোরার (COBE) এবং হাবল স্পেইস টেলিস্কোপের মাধ্যমে পাওয়া ফলাফল যুক্ত করা হয়েছে।

প্রায় চল্লিশ বছর আগে রিচার্ড ফাইনম্যান বলেছিলেন,
আমরা সৌভাগ্য যে আমরা এমন এক যুগে বাস করছি যেখানে আমরা এখনও নানান কিছু আবিষ্কার করছি। অনেকটা যেন আমেরিকা আবিষ্কারের মত- এটাতো মাত্র একবারই আবিষ্কৃত হয়। আমরা এমন যুগে বাস করছি যখন আমরা প্রকৃতির একেবারে মৌলিক নিয়মগুলো আবিষ্কার করছি।

আমরা মহাবিশ্বের রহস্য জানার ক্ষেত্রে আগের অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় অনেক কাছে চলে এসেছি। এমন কিছু রহস্য ও তার ফলাফল সম্পর্কে একটি চিত্র তুলে ধরাই এ বইটি লেখার পেছনে আমাদের উদ্দেশ্য। 

স্টিফেন হকিং ও লিওনার্দ ম্লোডিনো